সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ এবং অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছর করতে প্রস্তাব দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ এবং অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছর করতে প্রস্তাব দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ

ভূমিকা

সরকারি চাকরি বাংলাদেশের যুবকদের জন্য একটি অন্যতম আকর্ষণীয় ক্ষেত্র। সরকারি চাকরি শুধুমাত্র চাকরি পাওয়ার সুযোগ নয়, বরং এটি সামাজিক মর্যাদা, নিরাপত্তা এবং পেনশন সুবিধার মতো অনেক সুবিধা প্রদান করে। তাই, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা এবং অবসরের বয়সসীমা সংশোধনের প্রস্তাবটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এই প্রস্তাবের উদ্দেশ্য ও প্রভাবগুলো বিশ্লেষণ করা এই প্রবন্ধের লক্ষ্য।

সরকারি চাকরির গুরুত্ব

সরকারি চাকরি দেশের জন্য একটি মূল শক্তি। এটি জনসেবার জন্য নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানসমূহে কাজ করার সুযোগ দেয়, যা দেশের উন্নয়ন এবং সুশাসনের জন্য অত্যাবশ্যক। সরকারি চাকরি প্রদান করে:

  • নিরাপত্তা: সরকারি চাকরিতে থাকা ব্যক্তিরা চাকরির নিরাপত্তা পান, যা বেসরকারি খাতে সাধারণত কম।
  • বেতন ও সুবিধা: সরকারি চাকরিতে বেতন সাধারণত স্থিতিশীল এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা যেমন পেনশন, চিকিৎসা সেবা ইত্যাদি পাওয়া যায়।
  • সমাজে মর্যাদা: সরকারি চাকরি এক ধরনের সামাজিক মর্যাদা এবং গৌরব এনে দেয়।

বয়সসীমার প্রস্তাব: ৩৫ এবং ৬৫

প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫

প্রস্তাব অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের জন্য বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণ করা হচ্ছে। এই পরিবর্তনের কিছু সুবিধা:

  1. যুবকদের সুযোগ: বর্তমানে, বিভিন্ন কারণে অনেক যুবক তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করতে দেরি করেন। ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত প্রবেশের সুযোগ দিলে অনেক যুবক সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারবেন।
  2. নতুন দক্ষতা: নতুন প্রজন্মের কাছে আধুনিক প্রযুক্তি এবং সমসাময়িক চিন্তা-ভাবনার প্রভাব রয়েছে। তাদের নিয়োগ দিলে সরকারি দপ্তরে নতুন উদ্ভাবনী ধারণা ও দক্ষতা নিয়ে আসা সম্ভব।
  3. জনসংখ্যার চাপ কমানো: সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির ফলে দেশে জনসংখ্যার চাপ কিছুটা কমতে পারে।

অবসরের বয়সসীমা ৬৫

অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছর নির্ধারণের প্রস্তাবের সুবিধাগুলো হলো:

  1. অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান: সরকারি চাকরিতে অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ। ৬৫ বছর পর্যন্ত চাকরি করার সুযোগ পেলে অভিজ্ঞ কর্মীদের জ্ঞান ও দক্ষতা আরও বেশি কাজে লাগানো সম্ভব।
  2. জাতীয় উন্নয়ন: অভিজ্ঞ কর্মীদের নিয়ে গঠিত সরকারি দপ্তরগুলি বেশি কার্যকরী হয়ে ওঠে, যা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  3. বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা মোকাবেলা: প্রবীণ কর্মীদের কার্যকর অংশগ্রহণ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধানে সাহায্য করতে পারে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

এই প্রস্তাবের ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিক রয়েছে।

ইতিবাচক দিক

  • বৈচিত্র্য: সরকারি দপ্তরে বয়সের বৈচিত্র্য তৈরি হবে, যা কর্মসংস্থানে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনবে।
  • মোটিভেশন: যুবকদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা তাদের কর্মসংস্থানের দিকে আকৃষ্ট করবে।
  • অভিজ্ঞতা বিনিময়: অভিজ্ঞ কর্মীরা যুবকদের গাইড করতে পারবেন, যা কর্মক্ষেত্রে নতুনদের জন্য উপকারি হবে।

নেতিবাচক দিক

  • জব মার্কেটে চাপ: যদি প্রবীণ কর্মীরা বেশি সময় চাকরিতে থাকেন, তবে নতুন প্রার্থীদের জন্য চাকরির সুযোগ সীমিত হতে পারে।
  • নিয়োগের সঠিক ব্যবস্থা: বয়সসীমার এই পরিবর্তন যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না করা হয়, তাহলে এটির সুফল সীমিত হতে পারে।

আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি

অনেক দেশের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা এবং অবসরের বয়সসীমা বিভিন্ন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:

  • ভারত: সেখানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা সাধারণত ৩০-৩৫ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর।
  • যুক্তরাষ্ট্র: সেখানে সরকারি চাকরির জন্য বয়সসীমা নির্ধারণ নেই, তবে অবসর গ্রহণের জন্য সাধারণত ৬৫ বছর।
  • ইউরোপ: ইউরোপীয় দেশগুলিতে সরকারি চাকরির জন্য বয়সসীমা এবং অবসর গ্রহণের বয়সের মধ্যে বড় ধরনের বৈচিত্র্য রয়েছে।

উপসংহার

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছর করার প্রস্তাবটি দেশের যুবকদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। যদিও এতে কিছু চ্যালেঞ্জ ও নেতিবাচক দিক রয়েছে, তবে যথাযথ পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন করলে এটি দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই পরিবর্তনের সুফল নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে যুবকরা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং অভিজ্ঞ কর্মীরা তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা নতুন প্রজন্মের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারেন।

Update Original News

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ এবং অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছর নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) যুগ্মসচিব মো. সাজজাদুল হাসান স্বাক্ষরিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাধারণ অধিশাখা থেকে পাঠানো এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘উপর্যুক্ত বিষয়ে সরকারি চাকরিতে প্রবেশে ৩৫ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছরে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রাপ্তপত্র এইসঙ্গে পাঠানো হলো।

এই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বর্ণিত বিষয়ের সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিধি সম্পৃক্ততা থাকায় সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন চাকরি প্রার্থীরা। এই দাবিতে গত সপ্তাহেও রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। ৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে শত শত চাকরিপ্রত্যাশী শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে শহরের গুরত্বপূর্ণ এ মোড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনরতরা জানান, তারা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩৫ করার দাবিতে এখানে অবস্থান করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, ‘আমরা গত ১৪ বছর ধরে এ দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু আজও তার সমাধান পাইনি।’ বিষয়টি সমাধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি কামনা করেন তারা।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও এ নিয়ে সংসদে আলোচনা হয়েছে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই বলে জানিয়েছিলেন তৎকালীন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হেসেন। এ বছরের ৩ জুলাই সংসদে তিনি বলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হলে বিভিন্ন পদে বিপরীতে চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে। ফলে নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হতে পারে। এতে করে ৩০ বছরের কম বয়সী প্রার্থীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হতে পারে। 

তিনি বলেছিলেন, বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেশনজট নেই। আগে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের সেশনজট থাকলেও বর্তমানে উল্লেখযোগ্য কোনো সেশনজট নেই বললেই চলে। শিক্ষার্থীরা ১৬ বছরে এসএসসিসহ ২৩/২৪ বছরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে থাকে। চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর হওয়ার ফলে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পরও তারা চাকরিতে আবেদনের জন্য কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ বছর সময় পেয়ে থাকে। এছাড়া ৩০ বছর বয়সমীমার মধ্যে একজন প্রার্থী আবেদন করলে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ২/১ বছর লেগে যায়। ফলে চাকরিতে যোগদানের জন্য ন্যূনতম বয়স ৩০ বছর থেকে ৩৫ বছর করার যে দাবি করা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে তার কাছাকাছি পর্যায়ে উপনীত হয়।

পাবলিক সার্ভিস কমিশনের রিপোর্টের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় বিভিন্ন স্তরে উত্তীর্ণ প্রার্থীগণের বয়স ও জেন্ডারভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী কম বয়সী (২৩-২৫) সুপারিশকৃত প্রার্থীর সংখ্যা সব থেকে বেশি (৩৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ) এবং বেশি বয়সী (২৯ এর ঊর্ধ্বে) সুপারিশকৃত প্রার্থীর সংখ্যা সব থেকে কম ১ দশমিক ৭১ শতাংশ)।

তিনি জানান, চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা ৫৭ বছর থেকে ৫৯ বছরে উন্নীত হওয়ায় বর্তমানে শূণ্যপদের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই কমে গেছে। এ প্রেক্ষাপটে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হলে বিভিন্ন পদে বিপরীতে চাকরি প্রার্থীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে। এসব শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *